রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৪:১২ পূর্বাহ্ন

মুসলিমদের ওপর হামলা ঠেকাতে হিমশিম শ্রীলঙ্কা

মুসলিমদের ওপর হামলা ঠেকাতে হিমশিম শ্রীলঙ্কা

শ্রীলঙ্কার ক্যান্ডিতে মুসলিমদের ওপর হামলা ও সহিংসতা ঠেকাতে আরও সৈন্য নিয়োজিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। পুলিশ দাঙ্গা থামাতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হামলাকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ারগ্যাস ছোড়ে।

সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ সিনহালারা বিভিন্ন মসজিদ এবং মুসলিমদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছিল। মুসলমানদের সাথে বিবাদকে কেন্দ্র করে একজন বৌদ্ধ তরুণের মৃত্যুর খবরে তারা কারফিউ উপেক্ষা করে এসব হামলা চালায়।

মসজিদ ও মুসলমানদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উপর একের পর এক হামলার পর দেশটিতে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়। পরে কারফিউর মেয়াদও বাড়ানো হয়। দেশটির কর্তৃপক্ষ সামাজিক মাধ্যম ব্লক করে দিয়েছে।

মঙ্গলবার ক্যান্ডিতে একটি পুড়ে যাওয়া বাড়ির ভেতর থেকে এক মুসলিম তরুণের মৃতদেহ পাওয়ার পর থেকে সেখানে মুসলিমরা প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠতে পারে এবং আবারো সংঘাত শুরু হতে পারে এমন আশংকা করে কর্তৃপক্ষ।

নতুন করে সহিংসতায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সিনহালা সম্প্রদায় এবং সংখ্যালঘু মুসলিমদের মধ্যে রাতভর সংঘর্ষ চলে বেশকিছু এলাকায় এবং বহু বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়।

বুধবার ক্যান্ডি শহরে হাতবোমা বহনের সময় সিনহালা সম্প্রদায়ের একজন ব্যক্তি নিহত হয়েছে বলে খবর আসে।

এমন প্রেক্ষাপটে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সেইসাথে হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সরকারি মুখপাত্র রাজিথা সেনারাথানে।

ক্রিকেটার সাঙ্গাকারার টুইট

এদিকে এই দাঙ্গার ঘটনাকে ঘিরে সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারা টুইট বার্তায় এ ধরনের সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে লিখেছেন, শ্রীলঙ্কায় জাতিগত বা ধর্মীয় অবস্থানের কারণে কোনো মানুষ হামলা বা হুমকির শিকার হতে পারেনা।

সেখানে বর্ণবিদ্বেষ বা সহিংসতার কোনও স্থান নেই। সবাইকে জোরালোভাবে একে অন্যের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

যেভাবে শুরু দাঙ্গা

মধ্যাঞ্চলীয় ক্যান্ডি শহরে সপ্তাহ খানেক আগে গাড়ি সংক্রান্ত এক বিরোধের জেরে মুসলিমরা বৌদ্ধ এক তরুণকে পিটিয়ে হত্যা করেছে- এরকম একটি অভিযোগের পর সেখানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গত সপ্তাহে আমপারে শহরেও মুসলিম মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদে হামলা চালানো হয়।

কিছু কিছু এলাকায় সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ সিনহালারা মুসলিমদের মালিকানাধীন দোকানপাট ও বাড়িঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। সোমবার সেখানে পরিস্থিতি গুরুতর রুপ নিলে কারফিউ জারি করা হয়।

কিন্তু পরে সেটি কিছু সময়ের জন্যে তুলে নেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু ২৪ বছর বয়সী এক মুসলিম তরুণের মৃতদেহ পাওয়ার যাওয়ার সাথে সাথেই সেখানে আবার সান্ধ্য আইন জারি করা হয়। মসজিদ, বাড়িঘর, দোকান এবং গাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়।

স্থানীয় একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, “সবকিছু ভেঙে ফেলা হয়েছে, মুসলিমরা এখন সেখানে আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছে”।

মঙ্গলবার আগুনে পুড়ে যাওয়া একটি বাড়ির পাশে মুসলিম এক তরুণের মরদেহ উদ্ধারের পর সেখানে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। মুসলিমরাও প্রতিশোধ নিতে পাল্টা হামলা চালাতে পারে এই আশঙ্কায় পরিস্থিতি বিবেচনা করে ১০ দিনের জন্যে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়।

এছাড়াও ফেসবুকের মতো সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে যারা এধরনের সহিংসতায় উস্কানি দেবে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

২০১২ সালের পর থেকে শ্রীলঙ্কায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে। কট্টরপন্থী একটি বৌদ্ধ গ্রুপ বিবিএসের বিরুদ্ধে উত্তেজনায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com